ওয়াল্টন প্রিমো জি২: উপভোগ্য এক উজ্জ্বলতা

 

মোবাইল ফোনের বাজারে ওয়াল্টন দুর্দান্ত গতি এগিয়ে চলেছে, তাদের হাতে যেন একদম সময় নেই; একের পর একের স্মার্টফোন নিয়ে আসছে বাজারে।  আর নতুন নতুন ফোন তো পাইপ লাইনে রাখছেই। তাদের গতিবিধিতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে স্মার্টফোন বিক্রিতে এক নাম্বার পজিশনের দিকে তাদের নজর। ওয়াল্টনের প্রিমো সিরিজ অবশ্য ইতিমধ্যে তরুণ আন্ড্রয়েড প্রেমীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। দামে সাশ্রয়ী আর আর্কষনীয় ফিচারে আসা ফোন গুলো ক্রেতাদের সাধ আর সামর্থ্যের এক মেল বন্ধন তৈরী করে, ফলশ্রুতিতে ফোন গুলো ক্রেতার পকেটে যাচ্ছেতবে এখনো যেসব ক্রেতা দাম নয় বরং নামের ব্যাপারে অধিক আগ্রহী তাদের মন জয়ে ওয়াল্টনের সামনে এখনো অনেক পথ বাকি, এতো সবে শুরু


সে যাই হোক, আজকে আমরা কথা বলবো ওয়াল্টনের প্রিমো সিরিজের এক উত্তরসূরি জি২ নিয়ে। অবস্থা দৃষ্টি প্রিমো জি২ স্পেসিফিকেশন তার পূর্বসূরিদের  বেশ ভাল বলেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু নিশ্চয়ই জানেন স্পেসিফিকেশন সব সময় পারফর্মেন্সে অনূদিত হয় নাহ। বিষয়টি মনে রেখেই, চলুন দেখি কেমন হয়েছে প্রিমো জি ২।

 


package

যা যা পাবেনঃ


হ্যান্ডসেট

হেডফোন

ওয়াল চার্জার এবং মাইক্রো ইউএসবি কেবল

কুইক স্টার্ট গাইড

ওয়ারেন্টী পেপারস্‌

৩টি ভিন্ন ভিন্ন কালার ব্যাক কভার



primo_g2_front

 

বিল্ড কোয়ালিটিঃ

হ্যান্ডসেটটি দেখতে বেশ চমৎকার, ডিজাইন বা আকৃতি সব দিক থেকে সুন্দর। ওয়াল্টন জি ২ হাতের তালুর মাঝে রাখলে কোমল আর মসৃন একটা অনুভূতি পাওয়া যায়। কেসিংয়ের ম্যাট ফিনিসিংয়ের কারনেই বোধ করি এমন লাগে। জি২ আকৃতিতে মোটামুটি বড় (133.50x68x11 mm) কিন্তু সে হিসাবে বেশ পাতলা। আকার অনুযায়ী ওজনও বেশ কম, মাত্র ১৫৬.৮৩ গ্রাম। আর সব ফোনের মতই এই ফোনের পাওয়ার বাটনটিও উপরে দেওয়া, ভলিউম কন্ট্রোলার হল ফোনের বাম দিকে আর ইউএসবি পোর্ট হল ডান দিকে। বলে রাখি এর এর ইউএসবি পোর্ট আর চার্জিং পোর্ট একই। যে বিষয়টি আমার কাছে একটু অসুবিধার মনে হয়েছে, ডাটা কেবলের মানে ইউএসবি পোর্ট’টা হ্যান্ডসেটের উপরে অথবা নিচে হলেই ভাল হত কেননা তাতে করে ফোন’টা যেকোন কভারের মধ্যে রেখেই আমরা চার্জ দিতে পারতাম বা ডাটা কেবল কানেক্ট করতে পারতাম


left_side


প্রতিটি প্রিমো জি২ কেনার সাথে সাথে আপনি ৩টি আলাদা রঙের ব্যাক কভার পাচ্ছেন। রঙ গুলোর মাঝে রয়েছে সাদা, হলুদ আর কালো। এর মাঝে আপনার যেটা ভাল লাগে, ব্যক্তিত্বর সাথে যায় অথবা সাজ-পোশাকের সাথে মিলিয়ে যেকোনটি ব্যবহার করলেন। প্রিমো জি২ এর স্ক্রিন অবশ্যই স্ক্রাচ প্রতিরোধক না আর এজন্যেই প্যাকেটের সাথে একটি স্ক্রিন প্রতিরোধক দিয়ে দেয়। দুর্ভাগ্যবশত তার মান বেশ খারাপ, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা উঠে যায়। কাজেই নিজে থেকে একটা কিনে নিয়ে ফোন স্ক্রিনে লাগানোটা বুদ্ধিমানের মত কাজ হবে।


right_side


 

ডিসপ্লে এবং টাচ্‌ঃ

ওয়াল্টন জি-২ এর ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে আমার প্রথম অনুভূতি ছিল “ওয়াও”। ডিসপ্লে’টা অসাধারন, প্রিমো সিরিজের অন্যান্য মডেল গুলো থেকে উন্নত আর উজ্জ্বল। এর ৪.৫ ইঞ্চি পর্দার রেজুলেশন qhd (960x540) আর এটি দিচ্ছে ২৪৫ পিপিআই। এই ডিসপ্লেতে ছবি অনেক পরিষ্কার আর উজ্জ্বল দেখায় তবে এর ডিসপ্লের ব্ল্যাক লেভেল অন্যান্য (একটু দামী) ফোন গুলোর থেকে কম। আমার ধারণা ওয়াল্টন জি-২ এর প্রধান আকর্ষন এই দারুন ডিসপ্লে’টি হতে পারে।  

জি-২ এর টাচ্‌ রেসপন্স চমৎকার, নিঃসন্দেহ আপনার ভাল লাগবে। একদম মসৃণ আর কোন ল্যাগস নাই, তাই ভাল লাগা উচিত। ফোনের সিষ্টেমে খানিকটা ল্যাগিং থাকতে পারে (এই বিষয়ে পরে আসছি) কিন্তু টাচে্‌ এ সমস্যা নাই এর এক্সিলেরোমিটার সেন্সর চমৎকার কাজ করে, দ্রুত আর মসৃণ; আপনার ভাল লাগবে।

 

camera



ক্যামেরাঃ

জি২ তে পাচ্ছেন ৫ মেগা পিক্সেল রিয়ার ক্যামেরা আর এলইডি ফ্লাশ লাইটটি আছে পেছনের ক্যামেরার ঠিক নিচে। ক্যামেরাতে অ্যান্ড্রয়েড স্টক ইন্টারফেস পাচ্ছেন ক্যামেরাতে পাচ্ছেন অটোফোকাস আর ছবির সাথে সাথে ভিডিও করতে পারবেন। ক্যামেরার কয়েকটি বিষয় দৃষ্টি আকর্ষন করেছে, ছবি তোলার পর সেইভ হতে সাধারনের থেকে একটু সময় লাগে (হতে পারে মেমোরী কার্ডের Class-এর কারনে এমনটি হয়েছে, Class 32 মেমোরী কার্ড ব্যবহার করলে হয়তো এই সমস্যা হবে নাহ)। রাত্রে ফ্লাশে তোলা ছবি গুলোতে নয়েজ পরিমাণে একটু বেশি থাকে, ফ্ল্যাশ লাইট’টা আর একটু পাওয়ারফুল হলে হয়তো এই সমস্যা হত নাহ। তবে স্বাভাবিক আলোতে ছবি চমৎকার আসে। আর সামনে পাচ্ছেন একটি VGA ক্যামেরা পাচ্ছেন


normal_light

                        নরমাল আলোতে রাতে তোলা ছবি


জি২-তে ভিডিও করতে পারবেন ৪৮০পিক্সেলে যা খানিকটা আশাহত করার মত বিষয়, যদিও ৪৮০পিক্সেল অবশ্যই খারাপ নয়। কিন্তু তারপরও এটা ৭২০পিক্সেলে ভিডিও হবে না, এইটুকু যা মনবেদনার কারণ হতে পারে


pic_flash

                                               ফ্ল্যাশে তোলা ছবির স্যাম্পল

 



সিনথেটিক বেঞ্চমার্কঃ

নিজেরাই দেখুন বেঞ্চমার্ক টেষ্টের রেজাল্ট গুলো। টেষ্ট গুলার ক্ষেত্রে রিসেন্ট ভার্সন ব্যাবহার করা হয়ছে।


Antutu Benchmark টেষ্টের রেজাল্ট দেখুন

benchmark_test

 

Quardant টেষ্ট রেজাল্ট দেখুন

quardant


 

ডাটা কানেক্টিভিটিঃ

ওয়াল্টন প্রিমো জি২ দামে সাশ্রয়ী মন জয় করার ফোন, কাজেই এতে ডুয়েল-সিম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এর ডুয়েল সিমের দু’টো সিম স্ট্যান্ডবাই থাকতে পারে একই সময়। জি২-তে আপনি 2G নেটওয়ার্কে GSM 900/1800/1900 ব্যান্ড ব্যবহার করতে পারবেন আর 3G নেটওয়ার্কে UMTS 900/2100 ব্যবহার করতে পারবেন। 3G নেটওয়ার্ক সাপোর্ট থাকলেও এটি ব্যবহার করে ফোনের সামনের ক্যামেরা দিয়ে 3G ভিডিও কল কিন্তু করতে পারছেন নাহ। কারন জি২ এটি সাপোর্ট করে নাহ। তবে আপনি অন্যান্য সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঠিকই ভিডিও কল করতে পারবেন (যেমন- স্কাইপি দিয়ে আপনি তা করতে পারবেন 3G নেটওয়ার্কের উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে)। 3G তে আপনি সর্বোচ্চ স্পীড পাবেন HSDPA 7.2 Mbps, HSDUPA  5.76 Mbps


ওয়াল্টন প্রিমো জি২-তে GPRS আর EDGE দু’ধরনের ডাটা কানেক্টিভিটিই আছে। প্রিমো জি২-তে আছে ব্লু-টুথ ভার্সন-৩ কাজেই এর ব্লু-টুথ ডাটা ট্রান্সফার রেট চমৎকার দ্রুত গতি সম্পন্ন। আর হ্যান্ডসেটের ওয়াই-ফাই দারুন কাজ করে। এতে ওয়াই-ফাই হটস্পট সুবিধা আছে, সাথে আছে ওয়াই-ফাই ডাইরেক্ট যা দিয়ে আপনি ওয়াই-ফাই থাকা দু’টি ডিভাইস মাঝে যোগাযোগ স্থাপন করে ডাটা ট্রান্সফার করতে পারবেন (ব্লু-টুথ দিয়ে যেমনটি করেন আরকি) ইউএসবি-তে আছে মাইক্রো ইউএসবি ভার্সন-২ যা দিয়ে সুন্দর কাজ চলে যায়।

 

  

সিপিউ ও জিপিইউঃ

জি২ তে আছে QUALCOMM Snapdragon chipset আর প্রসেসর হিসাবে আছে ডুয়েল কোর ১.২ গিগা হার্জ ARMv7 জিপিইউ হিসাবে পাচ্ছেন Adreno 203এখন কার্যকরী দিক থেকে জি২ এর অ্যাড্রিনো ২০৩ এর পূর্বসরি জি১ এর জিপিইউ থেকে শক্তিশালী কিন্তু গেমিংএ জি১ দেখা গেছে বেশী ভাল পারফর্ম করেছে। জিপিউ-কে সাপোর্ট দেয় সিপিইউ, সেই হিসাবে বলা যায় জি২ এর সিপিইউ ভাল সাপোর্ট দিতে পারে নাই। Temple run OZ গেমস্‌ দু’টো ফোনে খেলে দেখা গেছে জি২ থেকে জি১ এর পারফর্মেন্স ভাল ছিল। জি১ খানিকটা ল্যাগস্‌ ছিল।


এক্ষেত্রে বলে রাখি সব গেমস্‌ কিন্তু একই সাথে সিপিইউ আর জিপিইউ এর সার্পোট নেয় নাহ। NFS Most Wanted, GTA Vice City (লো সেটিংসে্‌), Virtual Tennis আর Vector সহ আরো অনেক গেমস্‌ খেলা হয়েছে এবং প্রতিটি গেমস্‌ যথেষ্ট মসৃণ ভাবে চলেছে। এসবের সাথে আরো একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে জি২ এর আছে হাই-রেজুলেশন ডিসপ্লে যা কিনা আপনাকে দিতে পারে উপভোগ্য গেমিং অভিজ্ঞতা।    

 

 

অডিও কোয়ালিটিঃ

এক্ষেত্রে ওয়াল্টন প্রিমো জি২ দারুন অভিজ্ঞতা দিবে আপনাকে। হেডফোনের পরিষ্কার বেস্‌ আর ট্রিবলের সমন্বয়ে সাউন্ড কোয়ালিটি চমৎকার। তবে আপনি যদি ৩.৫ মিমি এর দামি কোন হেডফোন বা অন্য কোন সাউন্ড সিষ্টেম ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে জি২ এর অডিও আউট-পুট আরো ভাল পারফর্মেন্স দিবে, কেননা এর অডিও আউট-পুট সত্যিয় দারুন। অডিও ফাইল হিসাবে মোটামুটি সব ধরনের ফাইল সাপোর্ট করে তাই গান শুনতে আপনার থাকবে না আর কোন বাঁধা।


 

মিডিয়া প্লে-ব্যাকঃ

আজকার দিনে আমরা সবাই কমবেশী মোবাইল ফোনে মুভিজ, মিউজিক ভিডিও দেখতে পছন্দ করি। ওয়াল্টন জি২ ডিসপ্লে আপনাকে মুভি দেখা বা মিউজিক ভিডিও দেখাতে চমৎকার সাপোর্ট দিবে। আর যদি ডিসপ্লে ব্রাইটনেস্‌ বাড়িয়ে রাখেন তবে তো কথাই নাই, অসাধারন লাগবে। আমার একটা সাজেশন আছে এই ব্যাপারে, মুভি বা মিউজিক ভিডিও দেখার জন্য ফুল-স্ক্রিন ভিডিও ফাইল ব্যবহার করবেন। ওয়াইড-স্ক্রিন ভিডিও ফাইল গুলোর ক্ষেত্রে অনেক সময় ছবির উপর ও নিচে কালো বার থাকে (মনে হয় যেন ছবিকে কেটে সরু করে ফেলা হয়েছে) যা আপনার ভাল লাগবে নাহ। তো কেন এমন হচ্ছে, খুব সম্ভবত জি২ সব 720p ভিডিও ফাইল তার হার্ডওয়্যার এক্সিলেরেশন দিয়ে চালাতে পারে নাহ।


তবে একটু লোয়ার বিট-রেট (যেমন ১০০০) ভিডিও কিন্তু 720p তে চলে হয়তো তবে এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ফ্রেম স্কিপ করবে আর খনিকে সময়ের জন্যে অডিও-ভিডিও মিলতে নাও পারেতবে জি২ সবধরনের 480p ভিডিও ফাইল (হার্ডওয়্যার এক্সিলেরেশনে) চালাতে পারে একদম অনায়সে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই।


 

ব্যাটারী এবং অন্যান্যঃ

অন্যান্য সব স্মার্টফোনে যেখানে আমাদের সামনে ব্যাটারীগুলো পারফর্মেন্সে একটা প্রশ্ন-বোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে রাখে, প্রিমো জি২-তে এই ব্যাপারটিতে আপনি খানিকটা আয়েশে থাকতেই পারেন। ওয়াল্টন প্রিমো জি২-তে আছে Li-ion 1800mAh ব্যাটারী, যার পারফর্মেন্স সত্যি দারুন। সাধারণত ব্যাটারী ফুল চার্জ হতে সময় লাগে তিন ঘন্টার মত আর তা কোন রকম ব্যাড-বাজ ছাড়াই সারাদিন পার করে দিতে পারবে। আপনাকে এক সেকেন্ডের জন্যেও এটি নিয়ে দুঃচিন্তা করতে হবে নাহ। তবে আপনি যদি গেমার বা মাল্টিমিডিয়া প্রেমী হন সেক্ষেত্রে নির্ভর করবে কতবেশী ক্ষন ধরে খেলছেন। HD গেম অথবা মাল্টিমিডিয়া টানা চালালে ৩-৪ ঘন্টার কাছাকাছি চলবে। তবে আপনি গেমার বা মাল্টিমিডিয়া ইউজার নাহ হন শুধুমাত্র সাধারণ ব্যাবহার করেন তবে চার্জ অনায়সে ১.৫ দিন পার হবে যাবে।


 

সর্বশেষ কথাঃ

পুরো লিখাটি পড়ে থাকলে ধারণা করছি এটুকু বুঝে ফেলেছেন, আপনি গেমার বা মাল্টিমিডিয়া (অডিও বাদ রেখে ভাবুন, এর অডিও চমৎকার) ব্যাবহারকারী নাহলে ওয়াল্টন প্রিমো জি২ একটা দারুন অপশন। এর ব্যাটারী পারফর্মেন্স দারুন, সেন্সর গুলো চমৎকার কাজ করে, এর উজ্জ্বল আর বড় একটি ডিসপ্লে আছে, ডিজাইন আর আকৃতিতে সুন্দর; এসব মিলিয়ে জি২ একটি দারুন ফোন হতে পারে আপনার জন্যে।

 

  

Aronb রিভিউটি সম্পন্ন করেছেন

 Rizwan Rashid Arnob