হ্যান্ডস্‌ অন রিভিউঃ Walton Primo C2

কয়েক সপ্তাহ আগে, সিম্ফনী তাদের মিড-রেঞ্জ ফোন ডব্লিউ ৩৫ বাজারে ছাড়ে। দামের তুলনায় ফিচার গূলো বেশ ভালো হওয়ার কারনে ফোনটি বাজারে বেশ সাড়া ফেলে। মাত্র ৬ হাজার টাকার মধ্যে/আশে পাশে কোন জেলী বিন চালিত ফোণ মনে হয় এটিই প্রথম।

সিম্ফনির প্রধান প্রতিদ্বন্দি ওয়ালটন তাই বাজারে তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে বের করেছে ওয়ালটন প্রিমো সি২। তো যেদিন ওয়ালটন অফিসিয়ালি ফোনটি রিলিজ করে, সেদিনই আমি ফোনটি হাতে পাই।

তার বেশ কিছু দিন পর,আজ; আমি ওয়ালটন প্রিমো সি২  এর হ্যান্ডস অন রিভিউ লিখছি।

আশা করি, ওয়ালটন প্রিমো সি২ নিয়ে বেশ বিস্তারিত ধারনা পাবেন এই রিভিউ থেকে।

আনবক্সিংঃ ওয়ালটন প্রিমো সি২ একটি সুন্দর, ফ্ল্যাট ধাচের বক্সে থাকে যা সচরাচর ওয়ালটন এর ফোনগুলোতে দেখা যায় না। বক্সটি সহজেই যে কারো দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম।


বক্সের ভেতরে যা যা থাকছেঃ

একটি হ্যান্ডসেট, একটি চার্জার+মাইক্রো ইউএসবি, একজোড়া হেডফোন, একটি ব্যাটারী, ইউসার ম্যানুয়াল এবং একটি স্ক্রীনপেপার।

হ্যান্ডস অন রিভিউ দেখার আগে আসুন এক নজরে দেখে নিই ওয়ালটন প্রিমো সি২ এর স্পেসিফিকেশনঃ

**System: Android 4.2.2 Jelly Bean 

**Display: 3.5 inch, HVGA 480*320

**Processor: Dual Core ARM v7 rev3

**G.P.U: Mali-400

**Memory(RAM): 256 mb(229mb avaiable)

**Internel Storage: 512mb(120mb avaiable)

**Sensor: KXTJ2-1009 3-axis accelerometer

**Camera: rear 1.3mp and front 0.3mp

 

walton_primo_c2


বডি শেপ, ডিজাইনঃ

ওয়ালটন প্রিমো সি২ একটি সুন্দর,স্টাইলিশ ফোন। সাধারন রিব্র্যান্ডেড ফোন গুলোর তুলনায় এর ডিজাইন বেশ ভিন্ন-ই বলা চলে। ফোনটির রয়েছে কালো আর সবুজ রঙের মিশেলে দারুন এক ডিজাইন।

একটি সবুজ রেখা পুরো ফোন কে ঘিরে রেখে ফোনটিকে দিয়েছে দারুন এক লুক। ফোনের নিচের পার্ট-এ রেখাটি একটু বেকে গিয়ে ডিজাইনে যোগ করেছে অন্য মাত্রা।

 

walton_primo_c2


এছাড়া ওয়ালটন প্রিমো সি২ এর বিল্ড কুয়ালিটি বেশ ভালো। সচরাচর সিম্ফোনি,ওয়ালটন ফোন গুলোতে যে বিল্ড ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়,ওয়ালটন প্রিমো সি২ তার চেয়ে বেশ ভালো মানের প্লাস্টিক ব্যাবহার করা হয়েছে। ফলে ফোনটি ধরতে এবং ব্যবহার করতে  বেশ সাচ্ছন্দ্য বোধ হয়।

walton_primo_c2


ফোনের সামনের দিকে ডিসপ্লের উপরে রয়েছে একটি ছোট ফ্রন্ট ক্যামেরা। পেছনের দিকে রয়েছে রিয়ার ক্যামেরা এবং বেশ প্রশস্ত একটি স্পিকার।


রেটিংঃ ফোনের ডিজাইন ও বিল্ড কুয়ালিটি কে যদি রেট করতে বলা হয় আমাকে, আমি এই বিভাগে ওয়ালটন প্রিমো সি২ কে ৫ এর মধ্যে ৪ সহজেই দিতে পারি।


ডিসপ্লেঃ

সমস্যা নাম্বার ১:

ওয়ালটন প্রিমো সি২ তে ব্যবহার করা হয়েছে সাধারন HVGA(৪৮০*৩২০) ডিসপ্লে।

ডিসপ্লেটির পারফরম্যান্স বেশ ভালোই। যদিও ফোনটিতে কোন লাইট সেস্নর দেয়া হয় নি তার পরও সুর্যের আলোয় তেমন সমস্যা হয় না। ম্যানুয়ালি বাড়িয়ে নিলেই হয়।

ডিসপ্লের সব কিছু ঠিক আছে, যা ঠিক নেই তা হলো টাচ রেসপন্স।

ওয়ালটন প্রিমো সি২ এর টাচ রেস্পন্স খুবই বাজে ধরনের। হয়তো চার হাজারের ভেতর দাম রাখতে গিয়ে ওয়ালটন কমদামী টাচ স্ক্রীন ব্যবহার করেছে যার ফলশ্রুতিতে এই সমস্যা। মাল্টিটাচ কাজ করে না বেশির ভাগ সময়।

গেম খেলতে গিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। এছাড়া টানা ২/৩ ঘন্টা ইউস করলে টাচ স্ক্রীন ল্যাগি হয়ে পড়ে।

ওয়ালটন প্রিমো সি২ এর পিপিআই ১৬০ যা আপনি পরে রুট করে মডিফাই করতে পারেন।


রেটিংঃ অতিরিক্ত বাজে টাচ রেসপন্স এর জন্য এখানে ওয়ালটন প্রিমো সি২ এর রেটিং ৫ এর মধ্যে ১ দেয়া যায়।


র‍্যার্মঃ 

সমস্যা নাম্বার ২:

ওয়ালটন প্রিমো সি২ এর সবচে বড় সমস্যা হলো এর র্যানম। আমরা সাধারনত ৫১২ মেগাবাইট রামের নিচে কোন জেলি বিন ফোন কল্পনাই করতে পারি না, সেখানে ওয়ালটন প্রিমো সি২ তে মাত্র ২২০+ র্যা ম পাওয়া যায়।

স্বভাবতই আপনি এই র্যাপম নিয়ে মাল্টিটাসকিং, এইচডি গেমিং করতে পারবেন না। ভালো টাস্ক কিলার ছাড়া আপনি ওয়ালটন প্রিমো সি২ নিয়ে চলতেই পারবেন না।

রেটিংঃ একেবারে  “গরীবি” পারফরমেন্সের জন্য আমি ওয়ালটন প্রিমো সি২ এর র‍্যামকে ৫ এর মধ্যে ১ দিতে বাধ্য হলাম।


রম, প্রসেসর, জিপিইউঃ

একেবারে উপরে স্পেকস পড়লেই বুঝাযায় ওয়ালটন প্রিমো সি২ এর র্যা ম পরে অন্যান্য হার্ডওয়ার এর দামের তুলনায় কত ভালো।

কিন্তু মাত্র ২০০ মেগাবাইট রামের কারনে ডুয়াল কোর আর্ম ভি সেভেন আর মালি ৪০০ এর মত জিপিইউ 

নিষ্ক্রিয় বসে থাকবে। আপনার দেখে যাওয়া ছাড়া অন্য কিছু-ই নেই।


walton_primo_c2

 

ওয়ালটন প্রিমো সি২ এর ইন্টার্নাল মেমোরী ১২০ মেগাবাইট। কম মনে হচ্ছে?

কিন্ত না! যদি স্টোরেজ সেটিং এ গিয়ে ডিফল্ট রাইট ডিস্ক এবং প্রেফার্ড ইন্সটল লোকেশান হিসেবে এসডি কার্ড সিলেক্ট করেন তবে অনায়াসে ২০/২২ টি এপ্লিকেশন রাখতে পারবেন আপনি।


walton_primo_c2


ক্যামেরাঃ


ওয়ালটন প্রিমো সি২-তে রিয়ার ক্যামেরা ১.৩ মেগাপিক্সেল এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা ০.৩ মেগাপিক্সেল।

এগুলোর পারফরম্যান্স একেবারেই সাধারন মানের।

walton_primo_c2


walton_primo_c2


তবে ভিডিও সেটিংসে ৭২০পি রেকর্ডিং নামে একটা অপশন আছে। এটা কতটুকু কাজ করে তা নিয়ে আমি বেশ সন্দিহান।

তবে ০.৩মেগা পিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে সরাসরি কথা বলা যাবে স্কাইপে।


সাউণ্ড এবং হেডফোনঃ

ওয়ালটন প্রিমো সি২ তে সাধারনের তুলনায় বেশ বড় স্পিকার দেয়া আছে। তার পরো এর সাউণ্ড খুবই সাধারন মানের।

রিংটোন খুবই পরিষ্কার শুনা যায়। তবে মিউজিকপ্রেমীরা এই ধরনের সাউণ্ড কুয়ালিটি  নিয়ে খুশী হতে পারবেন না বলেই আমার ধারনা।

ওয়ালটন প্রিমো সি২-তে স্টক হিসেবে যে যে হেডফোন দেয়া হয়েছে তা মোটামুটি ভালো।

আমি আমার আইপডের হেডফোন দিয়ে গান শুনে বেশ মজা পেয়েছি।

তাই, বাজার থেকে একটু ভালো হেডফোন কিনে ব্যবহার করলে আপনি নিরাশ হবেন না।

আরেকটি কথা, আমি ওয়ালটন প্রিমো সি১ ও ব্যবহার করেছি। এই ফোন্টিতে যেখানে স্টক হেডফোন ছাড়া অন্য কোন হেডফোন-এ ভালো সাউন্ড পাওয়া যেত না সেখানে প্রমো সি২ বেশ উন্নতি করেছে।


এপ্লিকেশন ড্রয়ার,মিউজিক প্লেয়ারঃ

ওয়ালটন প্রিমো সি২  এ বলতে গেলে স্টক জেলি বিন ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে এপ্লিকেশন ড্রয়ার এ একটু বৈচিত্র্য আনা হয়েছে MiUI আইকনের ব্যবহার করে। স্টক জেলি বিনের বাইরে এই আইকন ব্যবহার করায় অ্যাপ ড্র্যয়ার বেশ সুন্দর লাগে।


walton_primo_c2


walton_primo_c2



মিউজিক প্লেয়ার ও ডিফল্ট জেলি বিন মিউজিক প্লেয়ার।


walton_primo_c2


তবে ভাল এক্সপেরিয়েন্সের জন্য TTpod ব্যবহার করা ভালো। যদিও র্যািমের স্বল্পতার কারনে আমাকে TTpod আন ইনস্টল করতে হয়েছে।

ডিফল্ট যে ভিডীও প্লেয়ার আছে ওয়ালটন প্রিমো সি২ তে, সেটি সব ফরমেট প্লে করতে পারে না। এজন্য MX প্লেয়ার-ই শ্রেষ্ঠ সমাধান।


ইন্টারনেট ব্রাউজিং, পিডিএফ পড়াঃ

ওয়ালটন প্রিমো সি২ তে কোন ৩জি সুবিধা নেই।এজন্য আপনাকে জিপিআরএস/এজ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।ব্রাউজিং এর ক্ষেত্রে তেমন আহামরি কিছু নাই। তবে, টানা ২/৩ ঘন্টা ব্রাউজিং করার পর ডিসপ্লের টাচ একটু ল্যাগি/ইরেস্পন্সিভ হয়ে যায়।

এডবী পিডিএফ রিডার দিয়ে পিডিএফ ফাইল পড়া বেশি সুবিধা না হলেও ইজি(EZ) পিডিএফ রিডার দিয়ে স্বাছ্যন্দে পড়া গেছে।

স্কাইপ???

হ্যা,ওয়ালটন প্রিমো সি২ তে স্কাইপ ব্যবহার করতে পারবেন আপনি।

তবে, খুব ভালোভাবে যে কথা বলতে পারবেন তার নিশ্চয়তা দিতে পারলাম না।

লাইন, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়া রান করেছে ওয়ালটন প্রিমো সি২  তে।


অ্যাপস, গেমসঃ

প্রায় সকল ধরনের এপ্লিকেশন চলেছে ওয়ালটন প্রিমো সি২  তে।তবে,প্রক্সিমিটি সেন্সর না থাকায়,বেশ কিছু অ্যাপ ঝামেলা করেছে।

গেমিংঃ 

এইবার আসি গুরুত্বপূর্ন  বিষয়, গেমিং এ। আপনি মনে করতে পারেন, ডুয়াল কোর প্রসেসর, মালি ৪০০ জিপিইউ দিয়ে এইচডি গেম খেলতে পারবেন! কিন্তু তা না; বেশিরভাগ এইচডি গেম ল্যাগ করবে, চলবে না। কারন আপনার ফোনের র্যা ম মাত্র ২২০+ মেগাবাইট।

তবে এরপরও ওয়ালটন প্রিমো সি২  তে পেস ১২, রিকলেস ড্রাইভিং এইচডি, টেম্পল রান OZ, ওয়াইন্ড আপ নাইট বেশ স্মুথলি রান করেছে।


walton_primo_c2

 

walton_primo_c2


গেমিং এর ক্ষেত্রে ওয়ালটন প্রিমো সি২  কে যদি রেট করতে বলা হয়, তবে আমার রেটিং থাকবে ৫ এর মধ্যে ২।

তবে, বেশি গেমিং পাগল হলে আপনার জন্য এই ফোন না কেনাই ভালো। কারন পরে পস্তাতে পারেন।


ব্যাটারী লাইফঃ

একমাত্র এই একটি দিক ওয়ালটন প্রিমো সি২ কে আমার কাছে বেশ প্রিয় করে তুলেছে।

তা হলো, অসাধারন ব্যাটারী পারফরম্যান্স। এর আগে আমি সিম্ফোনী W5, W10, ওয়ালটন প্রিমো, ওয়ালটন প্রিমো সি১ ব্যবহার করেছি; কিন্তু কোন’টার ব্যাটারীতে একবার চার্জ দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে পারি নি এটা ভেবে, সারাদিন চার্জ থাকবে কিনা। ওয়ালটন প্রিমো সি২  এর ব্যাতিক্রম।

এই ফোনটিকে একবার চার্জ করলে ২৪ ঘন্টার উপর চার্জ থাকবে আশা করি; যতই হার্ডকোর ইউসার হোন না কেন আপনি!

এক চার্জে সাধারন ইউসারদের ক্ষেত্রে দেড় দিন পর্যন্ত ব্যাকআপ পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না ওয়ালটন প্রিমো সি২  তে।


walton_primo_c2


ব্যাটারী ব্যাকআপ, এই সেকশনে ওয়ালটন প্রিমো সি২ কে আমি ৫ এ ৪.৫ দিবো নিঃসন্দেহে!

বেঞ্চমার্কঃ

সবার শেষে আসি বেঞ্চমার্ক এ।

কোন অজানা কারনে AnTuTu Benchmark এর লেটেস্ট ভার্সন  4.0 রান করে নি ওয়ালটন প্রিমো সি২ তে।

তাই AnTuTu Benchmark 2.9.3 এর স্কোর দেখতে হচ্ছে আমাদের।


walton_primo_c2

 

এখন যদি আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন কিনব ওয়ালটন প্রিমো সি২?

আমি বলবঃ

১. ভাল ডিজাইন,স্মার্ট লুকের জন্য।

২. জেলি বিন এক্সপেরিয়েন্স করার জন্য।

৩. ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা থাকায় স্কাইপে ভিডিও কল করতে পারবেন।

৪. ভালো ডিসপ্লে, এমনকি কড়া রোদেও।

৫. অসাধারন ব্যাটারী ব্যাক-আপ।

৬. খুবই কম দাম, মাত্র ৩৯৯০৳।


এখন যদি আপনি আমাকে পালটা প্রশ্ন করে বসেন, কেন আমি ওয়ালটন প্রিমো সি২ কিনব না?

আমি বলবঃ

১. নিম্নমানের টাচ রেসপন্স।

২. ৩জি নাই।

৩. খুব কম র্যাটম, মাত্র ২২৯ মেগাবাইট।

৪. প্রক্সিমিটি সেন্সর নাই।

৫. মোটামুটি ধরনের সাউন্ড কোয়ালটি।


sakib_muthofon লিখেছেন

 নাজমুস সাকিব