নকিয়া কি ফিরছে মার্কিন বাজারে?

সেলফোনের জগতে একসময় নকিয়া ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও সর্বব্যাপী। বৈশ্বিক সেলফোনের বাজারে রীতিমতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল নকিয়া। কিন্তু স্মার্টফোনের আগমনে রাতারাতি বদলে যায় মোবাইল ফোনের বৈশ্বিক বাজার। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় ফিনল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে ২০১৩ সালে মাইক্রোসফটের কাছে মোবাইল ডিভাইস বিভাগ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় নকিয়া। মাইক্রোসফটের এ ব্যবসাও কয়েক বছরের মধ্যেই ধসে পড়ে। এর পর ছোট্ট এক বিরতির পর আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে নকিয়া। ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্ট ফক্সকনের সাবসিডিয়ারি এফআইএইচ মোবাইলের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ফিনল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচএমডির হাত ধরে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্র্যান্ডটি। অল্প সময়ের মধ্যেই ফিচার ফোন ও স্মার্টফোনের বাজারে শক্ত অবস্থান গড়ে নিয়েছে নকিয়া। বর্তমানে অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী এক লক্ষ্য নিয়েছে মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডটির স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান এইচএমডি। যুক্তরাষ্ট্রে আবারো নকিয়ার বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।


২০১৬ সালে ৩৫ কোটি ডলারে মাইক্রোসফটের কাছ থেকে নকিয়ার পুরনো ফিচার ফোন ডিভিশন কিনে নেয় এইচএমডি। এরপর থেকে ক্রমেই টেকসই ও সাশ্রয়ী ডিভাইস বাজারে ছেড়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে বাজারে টেকসই গঠনের ফোন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে নকিয়ার পুরনো সুনামটি এখনো ধরে রেখেছে এইচএমডি। পুরনো নকিয়ার মতোই সেলফোনের ব্যবসাকে ফিচার ফোন ও স্মার্টফোন এ দুই ভাগে বিভক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ফিচার ফোন বিভাগ নকিয়ার ৩৩১০ ও ৮১১০-এর মতো পুরনো নন্দিত মডেলগুলোকে নতুন চেহারায় বাজারে ফিরিয়ে এনে বেশ সফলতার মুখ দেখেছে। অন্যদিকে স্মার্টফোন বিভাগটিও বৈশ্বিক স্মার্টফোনের বাজারে এরই মধ্যে শীর্ষ ১০ ব্র্যান্ডের অন্যতম হিসেবে নকিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। এ অবস্থায় আরো এক লক্ষ্য হাতে নিয়েছে এইচএমডি। অত্যন্ত কঠিন কিন্তু আকর্ষণীয় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নকিয়া ব্র্যান্ডের পুরনো দাপট ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।


এতদিন পর্যন্ত অ্যামাজনের মতো সাইট ও বেস্ট বাইয়ের মতো স্টোরগুলোর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নকিয়া ব্র্যান্ডের বেশকিছু মোবাইল ফোন বিক্রি করেছে এইচএমডি। সমস্যা হলো, মার্কিন ভোক্তাদের অধিকাংশই মূলত সেলুলার ক্যারিয়ারের মাধ্যমেই তাদের মোবাইল ফোন ক্রয় করে থাকেন। সে হিসেবে যেসব কোম্পানি এসব ক্যারিয়ারের সঙ্গে কাজ করে না, বাজারের অধিকাংশ ভোক্তার কাছে তারা অদৃশ্যই থেকে যায়।


এইচএমডি জানিয়েছে, তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি যারা নকিয়ার রমরমা অতীত প্রত্যক্ষ করেনি, তাদের মধ্যেও ব্র্যান্ডটির জনপ্রিয়তা তৈরিতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি তরুণ ভোক্তাদের মধ্যে এখন অনেককেই পাওয়া যাবে, যাদের কেনা জীবনের প্রথম মোবাইল ফোনটি নকিয়া ব্র্যান্ডের।


মার্কিন বাজারে পুরনো দিনের নস্টালজিক ব্র্যান্ডগুলো এখন বাজারে বেশ সফলভাবেই প্রত্যাবর্তন করছে। নিনটেনদো, ফিলা, প্যাটাগোনিয়া ও মিমি এক্ষেত্রে সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ। মার্কিন বাজারে নকিয়াও এখন এ সফলতা পেতে চাইছে। তবে যেখানে মার্কিন বাজারে প্রায় পুরোটাই এখনো অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো ব্র্যান্ডের দখলে, সেখানে এ প্রত্যাশা আসলে উচ্চাভিলাষেরই নামান্তর।


যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কম দামে ফোন সরবরাহকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাজার অংশীদারিত্ব কেড়ে নিতে চলতি মাসেই সেখানকার দুই ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠান ক্রিকেট ওয়্যারলেস (এটিঅ্যান্ডটি মোবাইলের সাবসিডিয়ারি) ও ভেরাইজনের সঙ্গে চুক্তি করেছে এইচএমডি।


ফিচার ফোন বাজারে ব্যাপক সাফল্যের অধিকারী নকিয়া ব্র্যান্ডের জন্য মার্কিন স্মার্টফোনের বাজার থেকে সাফল্য আদায় করে নেয়ার বিষয়টি বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে এ চ্যালেঞ্জ সামাল দেয়ার সক্ষমতা যে এইচএমডির রয়েছে, তার প্রমাণ এরই মধ্যে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।