শতশত ডলারের অনলাইন ট্রেনিং কোর্স এখন ফ্রী কোর্সেরাতে

বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯ মোকাবেলার অংশ হিসেবে অনেক দেশ ও অঞ্চল লকডাউনে আছে। টানা দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকার কারণে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। করোনা-পরবর্তী সময়ে যাদের অনেকের চাকরি ফিরে পাওয়া নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এ সময় চাকরি পেতে হলে বিপর্যস্ত অর্থনীতির বাজারে হতে হবে বিশেষভাবে দক্ষ। এমন বেকার হয়ে পড়া কর্মীদের করোনা-পরবর্তী কর্মজীবনে যোগ্য করে তুলতে এগিয়ে এসেছে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাদানকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কোর্সেরা। আন্তর্জাতিক এ প্রতিষ্ঠান বিশ্বের লাখ লাখ বেকার হয়ে পড়া ঘরবন্দি মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিনা মূল্যে শিক্ষা দিচ্ছে, যা তাদের দক্ষ হিসেবে পরিচিত করতে সহায়তা করবে। খবর সিএনবিসি।


‘ওয়ার্কফোর্স রিকভারি ইনিশিয়েটিভ’ নামে নেয়া এ প্রকল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর সরকার এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করছে কোর্সেরা। বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যামাজন, গুগলের মতো করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বাছাই করা ৩ হাজার ৮০০টি কোর্সের ওপর এ অনলাইন শিক্ষা দিচ্ছে অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্মটি।


২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির এমন উদ্যোগ থেকে চাকরিচ্যুত কর্মীরা নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারবেন বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। করোনাপরবর্তী চাকরির বাজারের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে এসব কোর্স নির্ধারণ করা হয়েছে। বিনা মূল্যে অনলাইন অ্যাকসেসের মাধ্যমে এসব কোর্স কর্মীদের চাকরির বাজারে আরো বেশি যোগ্য করে তুলতে সহায়ক হবে।


প্লাটফর্মটি থেকে অনলাইন লার্নিংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সার্টিফিকেট বা সনদ অর্জন। এসব পেশাগত সার্টিফিকেট অর্জন করতে গেলে যেখানে এসব কর্মীকে বড় একটা অংকের অর্থ ঢালতে হতো, সেখানে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে শিক্ষা এবং সার্টিফিকেট অর্জন করতে সক্ষম হবেন তারা। এমনকি ‘গুগল আইটি সাপোর্ট প্রফেশনাল সাপোর্ট সার্টিফিকেটে’র মতো চাহিদাসম্পন্ন সনদও অর্জন করতে পারবেন অংশগ্রহণকারীরা, যা তাদের চাকরির জীবনবৃত্তান্তকে আরো বেশি ভারী বা চাহিদাসম্পন্ন করে তুলবে। অগণিত ক্লাসের মাধ্যমে এসব কোর্সের ওপর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যেখানে অন্য সময় এসব বিষয়ে শিক্ষা নিতে গেলে কমপক্ষে একজন ব্যক্তিকে বছরে ৩৯৯ ডলার ব্যয় করতে হতো।


কোর্সেরার এমন উদ্যোগের বিষয়ে অনলাইন প্লাটফর্মটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেফ ম্যাগিয়োনক্যালডা বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী ১৬০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী বাসায় অবস্থান করছে। ফলে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোর্সেরার উদ্যোগ তাদের জন্য উপকারী হবে।


গত বছর সিএনবিসির ডিসরাপ্টার জরিপে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র্যাংকিয়ে ২১তম অবস্থানে ছিল কোর্সেরা। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানটির অনলাইন রেজিস্টারকৃত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ৬০ লাখ। যার মধ্যে গত মাসেই যোগ হয়েছে ১ কোটি ব্যবহারকারী। অর্থাৎ নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনলাইনে লার্নিং প্লাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে বেশিসংখ্যক মানুষ।


সিইও জেফ ম্যাগিয়োনক্যালডা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ কাজ হারানো কর্মীর জন্য এ উদ্যোগ খুব ভালোভাবে কাজে দেবে। বিশেষ করে বিশ্ব অর্থনীতির অবনমনের এ সময় কোর্সেরার কোর্সগুলো নিঃসন্দেহে বাড়তি উপযোগ সৃষ্টি করবে। আর কোর্সেরার মূল লক্ষ্যটাও কিন্তু সেটিই।


বিবৃতিতে কোর্সেরা জানায়, প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস, অ্যারিজোনা ও ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের বেকার হয়ে পড়াদের পাশাপাশি কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, গ্রিস, মালয়েশিয়া, পানামা, ইউক্রেন ও উজবেকিস্তানের জন্য তাদের কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। তবে তাদের এ কার্যক্রম শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের আরো একাধিক অঙ্গরাজ্য ও কয়েক ডজন দেশে চালু হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ চলছে।


অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্ম কোর্সেরা প্রতিষ্ঠা করেন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু এনজি ও ড্যাফেন কোলার। ইঞ্জিনিয়ারিং, হিউম্যানিটিজ, মেডিসিন, বায়োলজি, ম্যাথমেটিক্স, বিজনেস, ডিজিটাল মার্কেটিং, ডাটা সায়েন্সসহ এ প্লাটফর্মে কয়েক হাজার কোর্স করানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা এখানে অনলাইন ক্লাস নিয়ে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, কোর্স শেষে সেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোর্সের ওপর অফিশিয়াল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ঘরবন্দি মানুষ এবং চাকরি হারানোদের জন্য কোর্সগুলোর বেশির ভাগই বিনা মূল্যে করার সুবিধা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

visit: coursera dot com