বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় 5G তে সম্ভাবনা দেখছে হুয়াওয়ে

ফাইভজি সরঞ্জামের নিরাপত্তা বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে নিষেধাজ্ঞার মুখে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে নজর দিয়েছে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় ফাইভজি প্রযুক্তির সস্তা সরঞ্জামের বাজার বিস্তারের সমূহ সম্ভাবনা দেখছে কোম্পানিটি। একই সঙ্গে ভারতকেও পাশে টানার চেষ্টা করছে এ টেক জায়ান্ট। খবর নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ।


চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক রয়েছে, এমন একটি ধারণা থেকে ভারতের উদ্বেগ হুয়াওয়ে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ফাইভজির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা মাথায় রেখে ভারতের এ উদ্বেগ দূর করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হুয়াওয়ে।


হুয়াওয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুখপাত্র নিক্কেই এশিয়ান রিভিউকে বলেন, রাজনীতির বাইরে গিয়ে ডিজিটালাইজেশনে গুরুত্ব দিলেই সব স্টেকহোল্ডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ন থাকবে। গ্রাহকদের জন্য পরীক্ষামূলক উন্মোচনটি সফল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমাদের। ফাইভজি ইকোসিস্টেমকে সামনে এগিয়ে নিতে আমরা শিল্প সহযোগীদের নিয়ে কাজ করব।


আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে ফাইভজি সেবা চালু করতে চাইছে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। আর বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ পঞ্চম প্রজন্মের এ ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেবা চালু করার চিন্তাভাবনা করছে।


বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বাস দক্ষিণ এশিয়ায়। বিপুল জনসংখ্যার এ অঞ্চলে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হারও অনেক বেশি। ২০২৫ সাল নাগাদ এ হার ৬১ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ফলে এ অঞ্চল  হুয়াওয়ের মতো ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রীতিমতো স্বর্ণখনি তুল্য!

 

তাছাড়া কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে হুয়াওয়ের আয়ও ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের মোট সাড়ে ১০ হাজার কোটি ডলার আয় হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে ফাইভজি প্রযুক্তি কোম্পানির ১ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের ব্যবসার সুযোগ তৈরি করবে বলে আশা করছে হুয়াওয়ে।


সাইবার মিডিয়া রিসার্চের ইন্ডাস্ট্রি ইন্টেলিজেন্স বিভাগের প্রধান প্রভু রাম বলেন, গোটা দক্ষিণ এশিয়াতেই খুবই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে হুয়াওয়ে। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালু করার ক্ষেত্রে কোম্পানিটির প্রভাব রয়েছে।

 

গত ফেব্রুয়ারিতে বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার দেশের টেলিকম অবকাঠামোয় হুয়াওয়ের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। শ্রীলংকার  ডিজিটাল অবকাঠামো এবং তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অজিত পেরেরা এ সম্মেলনে জানান, চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ নেই। শ্রীলংকার ৭০ শতাংশ নাগরিক হুয়াওয়ের সরঞ্জাম ব্যবহার করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

এদিকে বেইজিং ও ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে পাকিস্তানে ফাইভজি সেবা সম্প্রসারণে সবচেয়ে আশাবাদী হুয়াওয়ে। পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানে হুয়াওয়ের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এখানে কোম্পানি আরো সুযোগ নিতে পারবে।

 

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভালো করলেও ফাইভজি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের পণ্য নিষিদ্ধ করা নিয়ে মিত্রদেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপ কোম্পানির ব্যবসায় প্রভাব ফেলছে। গত বছর হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার ব্যবসা ১ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ব্রিটেনের আইএইচএস মার্কিট জানিয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাতা হিসেবে হুয়াওয়েকে পেছনে ফেলেছে সুইডিশ কোম্পানি সনি এরিকসন।


[তথ্য সুত্রঃ অনলাইন]