সিম্ফনি ডব্লিউ ১২৫ : হয়তো এতদিন যার খোঁজে ছিলেন!
বাংলাদেশের বাজারে থাকা লোকাল ব্র্যান্ড গুলোর মাঝে সিম্ফনি তাদের Symphony W125 দিয়ে কোয়াড কোর ফোনের সাথে ক্রেতাদের পরিচয় ঘটালো। কোয়াড কোর এ ফোন কমবেশি সবার মাঝেই আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল এবং এখনও এই আগ্রহের কোন কমতি দেখা যাচ্ছে নাহ। ফোনটি বাজারে আসার মাত্র ২ দিনের মাথায় স্টক শেষ হয়ে যায়, যার জন্যে ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও এর দাম নির্ধারন করা হয়েছিল ১৪৯৯০ টাকা কিন্তু মার্কেটে অধিক চাহিদার কারনে তা সিম্ফনি আউট-লেটের বাইরে ১৬-১৭ হাজারে বিকোচ্ছে। তো কি আছে এই ফোনটির; কেন এত আগ্রহ; ফোনটি কি সত্যিই আগ্রহের দাবীদার নাকি, শুধুই একটা হাইপ?
চলুন তবে আর দেরী না করে, দেখা যাক ফোনটির বিশ্লেষন।
মুল বৈশিষ্ট্যঃ
১. কিউএইচডি রেজেলুশেন ৯৬০x৫৪০, ২৪৫ পিপিআই ৪.৫ ইঞ্ছি আইপিএস ডিস্প্লে (১৬মিলিয়ন কালার)
২.Chipset:MediatekMT6589, CPU: 1.2GHz ARM v7 Quad core Cortex A7, Graphics core:PowerVR SGX544MP
৩. ১জিবি র্যাম
৪. ৮ মেগাপিক্সেল ব্যাক, ১ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যমেরা। ব্যাক ক্যমেরা অটোফোকাস, ফ্লাশ, কন্টিনিয়াস ফটোসুট সাপোর্ট করে। ১০৮০পি (৩জিপি) ৩০ এফপিএস ভিডিও ক্যাপচার সাপোর্টেড
৫. ৩২ জিবি মাইক্রো এসডি সাপোর্টেড
৬. ব্লু-টুথ ভার্সন ৪
৭. ২১০০ এম্পিয়ার ব্যটারি
৮. গায়রোস্কোপ সেন্সর সাপোর্টেড
৯. ডুয়াল সিম, ৩জি
কিছু ঋনাত্নক দিকঃ
১. ডিসপ্লে রিফ্লেকশন অনেক বেশি
২. ব্যাক কভার একটু পিচ্ছিল এবং হাত ঘামায়
৩. বেশ ওজন, ১৪৩.৫গ্রাম
মুলরিভিউঃ
বক্স এবং ডিজাইনঃ
সিম্ফোনী w125 এর সাথে দেওয়া হচ্ছে একটি ডাটা কেবল, চার্জার, ইয়ার বাড, ওয়ারেন্টি কার্ড। ডিজাইন এর কথা বললে বলতেই হয় খুব চমৎকার বানিয়েছে। অনেক কম্প্যাক্ট, কম্ফোর্টেবল লাগে মোবাইলটা। তবে কিছুটা ওজন বেশি বোধ হয়। ব্যককভারটা ডটেড হলে আরো ভালো হতো কারণ w125 এর ব্যাক কভার এমন যে স্ক্রাচ ভালোই বোঝা যাবে (যদিও গ্লসি না)। তবে ওভারঅল w125 দেখতে খুবই সুন্দর।
এবার আসি বাটন এর কথায়। ডান পাশে আমরা পাচ্ছি ভলিউম এবং লক/পাওয়ার বাটন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ডান পাশে পাওয়ার বাটন পছন্দ করি কারণ খুব সহজে লক-আনলক করা যায়। উপরে আমরা পাচ্ছি ডাটা কেবল পোর্ট এবং উপরের বামে ৩.৫ এমএম অডিও পোর্ট। নিচে ৩ টি টাচ বাটন, মেনু, হোম, ব্যক।
ডিসপ্লেঃ
এতে রয়েছে ৪.৫ ইঞ্ছি 960x540 আইপিএস ডিস্প্লে। ২৪৫ পিপিআই খুব বেশি না হলেও ডিস্প্লে সার্পনেস ভালোই (যারা আরো বেশি ব্যবহার করে অভ্যস্ত তাদের ভাল নাও লাগতেও পারে)। আমার কাছে বিভিন্ন ভিউইং এঙ্গেলে কালার একই লেগেছে তবে একটু ব্রাইটনেস কমে যায়, এই যা। আর ডিস্প্লে রিফ্ললেকশন অনেক বেশি তাই আলোর ঠিক উল্টো দিকে থাকলে দেখতে একটু কষ্টই হবে আপনার। তবে সরাসরি তাকালে এর ডিস্প্লে অনেক ভালো লাগবে আপনার।
ইউজার ইন্টারফেসঃ
ইউজার ইন্টারফেস ডিফল্ট জেলী বীন থেকে একটু কাষ্টোমাইজ করা, সিম্ফনি একটি আপ্স্ “Theme Skin” প্রি-ইন্সটল করে দিয়েছে যার মাঝে আছে ৫টি ভিন্ন ভিন্ন থিম্ রয়েছে। তাই এর মাঝে থেকে নিজের পছন্দ মত একটি ব্যবহার করতে পারবেন। সব মিলিয়ে সিম্ফনি W125 এর UI আমার কাছে মোটামুটি স্মুথ মনে হয়েছ।
ভিডিও এবং অডিওঃ
আমি ফুল এইচডি ১০৮০পি ভিডিও কোনো সমস্যা ছাড়াই প্লে করতে পেরেছি এবং ভিডিও সিকিং এও কোনো প্রবলেম হয় নাই (অনেক দ্রুত)। এবং হার্ডওয়ার এক্সিলারেশনেই প্লে হয়। ভিডিও নিয়ে তেমন কোন ইস্যু নাই, আপনি HD ভিডিও চালাতে পারবেন অনায়সে। ১৬:৯ রেশিওতে চলে ভিডিও। আমার চালানো একটি ফাইলে ডিটেইল দেখুনঃ
File size : 205 MiB
Video
ID : 1
Format : AVC
Format/Info : Advanced Video Codec
Format profile : High@L4.0
Format settings, CABAC : Yes
Format settings, ReFrames : 1 frame
Codec ID : avc1
Codec ID/Info : Advanced Video Coding
Duration : 5mn 12s
Bit rate : 5368 Kbps
Maximum bit rate : 30.3 Mbps
Width : 1920 pixels
Height : 1080 pixels
Display aspect ratio : 16:9
Frame rate mode : Variable
অডিও নিয়ে আমি কিছুটা অসুন্তষ্ট কারণ সাউন্ড কোয়ালিটি একটু বাজে লেগেছে। ট্রিবল বেশি এবং বেইজ ও একটু কম লাগে। ইকুইলাইজার দিয়ে কিছুটা সমস্যা দূর হলেও মিউজিক এক্সপেরিয়েঞ্জ ঝাক্কাস না। হেডফোনটা ভালোই, পিসিতে লাগিয়ে শুনতে ভাল লেগেছে। তাহলে মনে হয় মোবাইলের আউটপুট ঠিক সুবিধার নাহ। লাউড সাউন্ড মোটামুটি চলন সই।
ক্যমেরাঃ
ক্যমেরা নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। ৮ এম্পি অটোফোকাস ক্যমেরা। পিকচার কোয়ালিটি এখন পর্যন্ত আমার দেখা সেরা (লোকাল ব্র্যান্ডের চাইনীজ মেইড ফোন গুলোর এর মধ্যে)। তবে অন্য সকল ফোন গুলোর মতই এরও একটি কমন বৈশিষ্ট্য হল ফটো তুলবার সময় একটু জুম করলেই পিকচার এ একটু নয়েজ বোঝা যায়।
ইনডোরে রাতে তোলা
ফোনটিতে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেল রিয়ার ফেসিং ক্যামেরা এবং ১ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরা। সাথে রয়েছে এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট। এতে ক্যামেরার সেন্সর হিসাবে আছে BSI সেন্সর যার মানে দাঁড়ায় আপনি অল্প আলোতেও ভাল ছবি তুলতে পারবেন।
দিনের আলোতে ইনডোরে তোলা
তবে Symphony w125 এর ক্যামেরার একটি অসাধারন বৈশিষ্ট্য হল এটি দিয়ে কন্টিনিউয়াস ৪০-৯৯টা ইমেজ ক্যপচার করা যায় (এমনকি ফ্লাশ অন করেও! যেটা গালাক্সি এস৩ সহ অনেক দামী ফোনেও নাই)। একে বলা হয় HDR বা High Dynamic Range, অনেক গুলো ছবি তুলে পরে ছবি গুলো একত্রে জুড়ে দেয়। আপনার কাছে নিঃসন্দেহে ক্যামেরার এই অপশনটি ভাল লাগবে তা বলে দেওয়া যায়।
ট্যাংষ্টেন লাইটের মধ্যে তোলা
ভিডিও ১০৮০পি ক্যপচার করে ৩০ এফপিএস এ, হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। যদিও সিম্ফনির অফিসিয়াল সাইটে বলা হয়েছে এটি ৭২০পি রেটে ভিডিও রেকর্ড করে কিন্তু ফোনটির রেকর্ড করা ভিডিওর প্রপারটিজ থেকে নিশ্চিত হয়েছি, এটি ১০৮০পি ভিডিও রেকর্ডিং করতে পারে। আর ভিডিও করার সময় মোটামুটি দ্রুতই অটোফোকাস হয়।তবে ভিডিওর সার্পনেস একটু কম লাগে, এই যা।
ইন্টারনেটঃ
কোনো সমস্যা পাইনি টেলিটক ৩জি দিয়ে। ফুল স্পিডই পেয়েছি এবং ব্রাউজিং করে আরাম আছে। আর হ্যাঁ ভিডিও কল করা যায় কিনা ভাবছেন, নিশ্চিন্ত থাকুন ভিডিও কল করতে পারবেন আরামসে, কোন সমস্যা নাই। এর সামনের ক্যামেরাটা ১মেগা পিক্সেলের হওয়াতে আরো সুবিধা হয়েছে। ভিডিও কলে ছবি ভাল আসে। তবে নেটওয়ার্ক ঝামেলা করলে ছবি মাঝে মাঝে থেমে থেমে যায়, এটা ফোনের সমস্যা নয় (তাই চিন্তিত হবার কিছু নাই)।
সিম্ফোনি w125 এর সেন্সরঃ
Symphony W125 তে আদৌ সব রকমের সেন্সর দেওয়া আছে কিনা এটা নিয়ে অনেকের মাঝেই দ্বিধা আছে তবে আমার বক্তব্য হচ্ছে; 3D অ্যাক্সেলেরোমিটার থেকে শুরু করে প্রক্সিমিটি, লাইট সেন্সর, জাইরোস্কোপ সহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সেন্সরই এতে রয়েছে। কাজেই এ নিয়ে দুঃচিন্তা করবার কিছু নাই।
বেঞ্চমার্কঃ
Antutu 3.3তে পেলাম ১২৭৩৪
Quadrant এ 3723
Nenamark 2.4 এ ৫৩.৫ এফপিএস
Vellamo তে HTLM 5 – 1424 Metal – 438
Geekbench এ ১২৭৯
ব্যটারি লাইফঃ
বর্তমান সময়ের সকল ফোনের ব্যাটারী নিয়ে কমবেশি কথা থাকবেই, আর কোয়াডকোর প্রসেসরের W125 এর ব্যাটারী নিয়ে অনেকের অনেক সন্দেহ রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। তবে আমার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করলে বোধ করি একটু স্বস্তিই পাবেন। আপনি যদি অনেক বেশি গেম না খেলেন তবে আরামসে ১.৫ দিন সাপোর্ট পাবেন, এর বেশীও পেতে পারেন কেননা এতে নেটওয়ার্কের একটা ভূমিকা থাকেই। হাই ব্রাইটনেসে ক্রমাগত ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে থাকলে, ৩-৪ ঘণ্টা পার করলেও করতে পারেন আর একটানা গেমিং (বিশেষ করে 3D) চালিয়ে গেলেও সর্বোচ্চ ৩-৩.৫ ঘণ্টা ব্যাক আপ পেতে পারেন। তবে মিউজিক নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নাই, বহুক্ষন ব্যাক দিবে। আর ব্যাটারী চার্জিংয়ে কেমন সময় লাগে; আমার টেষ্টে ব্যাটারী ১০% থেকে ফুল চার্জ করতে ২ ঘন্টার মত লেগেছে। কাজেই বুঝে নিন এতে সর্বোচ্চ ২.৫ ঘণ্টা লাগতে পারে।
গেইমস টেস্টেডঃ
কিছু গেইমের নাম দেই যেগুলো ফুললি স্মুথ চলেছেঃ
1. Dead Trigger
2. Front line commando
3. Contract Killer
4. GTA Vice City 10th anniversary edition
5. Max Payne
6. NFS Most Wanted
7. Pro Evaluation Soccar 2012
8. Prince of Persia Classic
9. Modern Combat 4
10. Virtua Tennis
11. The Dark Knight Rises
12. Asphalt 7 Heat
13. Nova 3
14. Temple Run OZ (high setting)
15. Subway Surfer
পরিশেষঃ
কিছু টুকিটাকি বিষয় বাদে অভারঅল ফোনটি চমৎকার লেগেছে। ব্যবহার করে এটুকু ভরসা পাওয়া যায় যে ফোনটি আপনার বিশ্বস্ত থাকবে, সারপ্রাইজ দিবে নাহ। যারা যারা এখন পর্যন্ত কিনেছেন তাদের থেকে ভাল রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে। তাই, বাজেটে মিললে নিয়ে নিতে পারেন, ঠকবেন নাহ আশা করি। তবে এখনও রুট এবং cwm recovery বের হয়নি বিধায় অনেক অ্যান্ড্রয়েড বিদ্বান বোধ করি কষ্টে আছেন। Xolo Q800 এর রুট মেথড কেউ ভুলেও ট্রাই করবেন নাহ, কারণ তাতে স্টক রিকভারি চলে যাবে। প্রথমে চিন্তা করে দেখুন আপনার রুট করার প্রয়োজন আছে কিনা, অযথা হুজুকের বশবর্তী হয়ে না করাই ভাল। আর নিশ্চয়ই জানেন ওয়ারেন্টি পিরিয়ডে রুট করলে আপনার ওয়ারেন্টি ভয়েড হবে, মানে আপনি আর ওয়ারেন্টি পাবেন নাহ। তাই তো জ্ঞানীরা বলেন “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিয়ো নাহ”।
রিভিউটি সম্পন্ন করেছেন
Rizwan Rashid Arnob