গ্রাফিনে ১৩৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে নকিয়া

মোবাইল ফোনসহ সব ধরনের প্রযুক্তি পণ্যেই সময়ের সাথে সাথে অনেক পরিবর্তনই এসেছে। আর এই পরিবর্তনের ধারাও অব্যাহত রয়েছে। সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধ-পরিবাহীর পরে প্রযুক্তি বিশ্বে বড় ধরনের এক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে যে পদার্থটি, তার নাম গ্রাফিন।


গত কয়েক বছর ধরেই গ্রাফিন নিয়ে চলছে নিরন্তর গবেষণা। মাত্র 'এক অণু' পুরুত্বের এই গ্রাফিনকে বিজ্ঞানীরা বলছেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পদার্থ। পরিশুদ্ধ কার্বনের তৈরি গ্রাফিন স্টিলের চাইতেও ৩০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। এই গ্রাফিন নিয়ে গবেষণাতেই এবারে ১৩৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে মোবাইল ফোন জায়ান্ট নকিয়া।


নকিয়া জানিয়েছে, তারা প্রথমে সংযুক্ত হয়েছে গ্রাফিন ফ্ল্যাগশিপ কনসোর্টিয়ামে, যার আওতাভুক্ত রয়েছে ৭৪টি শিল্প এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই কনসোর্টিয়ামের সাথে একযোগে গবেষণা করে মোবাইল বিশ্বে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব। গ্রাফিন নিয়ে নকিয়ার আগ্রহ এবং গবেষণার প্রসঙ্গে নকিয়ার চিফ টেকনোলজি অফিসার হেনরি টিররি জানান, ২০০৬ সাল থেকেই নকিয়া গ্রাফিন নিয়ে গবেষণা করে আসছে। বর্তমান সময়ে এসে আধুনিক কম্পিউটিংয়ের কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রাফিন নিয়ে কাজ করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছে নকিয়া এবং এর কারণেই এই গবেষণায় এই বিনিয়োগ করছে তারা। 


ভবিষ্যতের প্রযুক্তি হিসেবে গ্রাফিনের ব্যবহার নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী অন্যান্য গবেষকদের মতো নকিয়ার রিসার্চ সেন্টারের একটি গবেষণার প্রধান জানি কিভিওজা। তিনি বলেন, 'গ্রাফিনের কথা বলার অর্থই হচ্ছে নতুন এক দিগন্তের সূচনার কথা বলা। সত্যি সত্যিই আমরা গ্রাফিন বিপ্লবের সূচনালগ্নে দাঁড়িয়ে রয়েছি। একটা সময়ে লোহার ব্যবহার প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন এক যুগের সূচনা করেছে। পরবর্তীতে সিলিকন বয়ে এনেছে নতুন এক বিপ্লব। আর এখন সময় গ্রাফিনের।' উল্লেখ্য, গ্রাফিন নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্ব গত দুই-তিন বছর ধরে সরগরম হলেও বিভিন্ন গবেষণাগারে গত শতকের আশির দশক থেকেই দেখা মিলেছে প্রাথমিক পর্যায়ের গ্রাফিনের। তবে নতুন সহস্রাব্দের শূন্য দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে গ্রাফিনের ব্যবহার নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু হয়।


গ্রাফাইটের সাথে আকৃতিগত দিক থেকে গ্রাফিনের কিছুটা সাদৃশ্য থাকলেও এটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। ওজনের দিক থেকে এটি অকল্পনীয় রকম হালকা এবং এটি চমত্কার একটি বিদ্যুত্ পরিবাহী। এর বিশেষ কিছু আলোকধর্মও রয়েছে। হীরার চেয়েও এটি কঠিন। তবে প্রায় সব গবেষকদেরই ধারণা, গ্রাফিনের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার বা বৈশিষ্ট্য এখনও অজানা। আর সেই অজানাকে জানতেই গ্রাফিনে বিনিয়োগ করছে নকিয়া।